
নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
১. বায়ুমন্ডলে অ্যারোসলের গুরুত্ব নিরূপণ করো।
Contents
বাতাসের ভাস্য মান সূক্ষ সূক্ষ ধূলিকণা ,বালুকণা,লবণ কনা, অগ্নেয়োগীরি ও কলকারখানার থেকে নিঃসৃত কার্বন কনা – ভষ্ম প্রভৃতি কন্যাকে একত্রে অ্যারোসল বলে ।
গুরুত্ব :
i) বিকিরিত তাপ শক্তিকে অ্যারোসল কণাগুলি শোষণ করে বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করে ।
ii) বাতাসের জলীয় বাষ্প এই কনা গুলিকে আশ্রয় করে ভেসে বেড়ায় এর ফলে মেঘ কুয়াশা-বৃষ্টি প্রভৃতি সৃষ্টি হয় ।
iii) বাতাসে ভাসমান ধূলিকণায় বিচ্ছুরিত আলোর প্রভাবেই আকাশের রং নীল ।
iv) ঊষা ও গোধূলির সৃষ্টি এই অ্যারোসলের উপস্থিতির কারণেই হয় ।
২. মানুষের ক্রিয়াকলাপ ‘ পৃথিবীর প্রাকৃতিক সৌরপর্দা ‘ বিনাশের অন্যতম প্রধান কারণ – যুক্তিসহ ব্যাখ্যা দাও।
সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকারক অতি – বেগুনি রশ্মি এর 97%-99% বায়ুমন্ডলের ওজন স্তর শোষণ করে নেয়। এই ওজোন স্তর ছাকনির মত অতিবেগুনী রশ্মিকে ছেঁকে পুরো জীবকুল কে রক্ষা করে তাই ওজোন স্তরকে ‘প্রাকৃতিক সৌর পর্দা’ বলে ।
প্রাকৃতিক সৌর পর্দা বিনাশে মানুষের ভূমিকা :পৃথিবীর প্রাকৃতিক সৌর পর্দা বা ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য প্রধান দায়ী মানুষ। মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়া-কলাপ এর ফলে ওজন স্তর ধ্বংস হচ্ছে।
যেমন –
a) ক্লোরোফ্লুরোকার্বন যোগের প্রভাব :
CFC গ্যাসই ওজন ধ্বংসের মূল কারণ মানুষের ব্যবহৃত এসি ফ্রিজ হেয়ার ড্রায়ার থেকে নির্গত ক্লোরোফ্লোরো কার্বন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে ক্লোরিন পরমাণু তৈরি করে এবং ওজোন গ্যাসের সাথে বিক্রিয়া করে ওজন স্তর ধ্বংস করে ।
বিক্রিয়া : O3+Cl ->CLO +O2
b)হ্যালান যৌগে এর প্রভাব :
সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি হ্যালন 1211 এবং হ্যালন 1301 কে ভেঙে ফেলে ব্রোমিন পরামনুকে মুক্ত করে।এই জন্য প্রকৃত সৌরপর্দ বিনষ্ট হচ্ছে।
c)সালফেট যৌগ এর প্রভাব :
কলকারখানার থেকে নির্গত ধোঁয়াতে প্রচুর সালফার ডাই অক্সাইড থাকে।এই গ্যাস সূর্যরশ্মির প্রভাবে সালফেট যৌগ তৈরি করে এবং ওজন স্তরের ক্ষয় ঘটায়।
d) বিমান চলাচলের ফলে:
স্টাটোস্ফিয়ার এর মধ্যে দিয়ে বিমান চলাচল করে। এই বিমান থেকে নির্গত নাইট্রোজেন অক্সাইড ও নাইট্রোজেন মনো অক্সাইড ওজন স্তরকে ধ্বংস করে।
৩. ট্রপোস্ফিয়ারে বৈপরীত্য উষ্ণতা সৃষ্টির কারণ গুলি উল্লেখ করো।
উত্তর: সাধারণত ট্রপোস্ফিয়ারে ভূপৃষ্ঠ থেকে ক্রমশ উচ্চতা বাড়লে তাপমাত্রা হ্রাস পায় (প্রতি 1000 মিটার উচ্চতায় 6.5⁰c হারে)। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটে। অর্থাৎ উচ্চতা বাড়লেও কিন্তু উষ্ণতা কমে না বরং উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। এই উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকেই বৈপরীত্য উষ্ণতা বলে।
সৃষ্টির কারণ:-
i) নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের পার্বত্য উপত্যকার উপরের অংশের শীতল ও ভারী বায়ু পর্বতের গা বেয়ে নিচের দিকে নেমে আসে (ক্যাটাবেটিক বায়ু) এবং উপত্যকার নিম্নাংশের উষ্ণ বায়ু ওপরে ওঠে। এই অবস্থায় উপত্যাকার নিচের অংশে উষ্ণতা কম থাকে এবং উপরের দিকে উষ্ণতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
ii) ট্রপোস্ফিয়ারে অনেক সময় অধিক উচ্চতায় ঘন ও শুষ্ক বায়ুর অবনমন ঘটলে উষ্ণতা বেড়ে গিয়ে উষ্ণতার বৈপরীত্য ঘটে।
iii) শীতপ্রধান অঞ্চলে রাতের দিকে দ্রুত তাপ বিকিরণ হওয়ায় ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন অঞ্চল শীতল হয়ে যায়। কিন্তু ঊর্ধের বায়ু অত দ্রুত শীতল হয় না বলে উপরে উষ্ণতা কিছুটা বেশি থাকে।
iv) পরস্পর বিপরীত দিক থেকে আগত উষ্ণ ও শীতল বায়ুপুঞ্জ মিলিত হলে, শীতল বায়ু ঢাল বরাবর উষ্ণ বায়ু উঠে পড়লে বায়ু সীমান্ত বরাবর বৈপরীত্য উষ্ণতা ঘটে।
4. বায়ু মণ্ডলের উষ্ণতার তারতম্যের নিয়ন্ত্রক হিসেবে স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন এবং নগরায়ান ও শিল্পায়নের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ভূ পৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে বায়ুর উষ্ণতার অনেক তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার তারতম্যের অনেক নিয়ন্ত্রক রয়েছে। যেমন – অক্ষাংশ, পর্বতের অবস্থান, দিন রাত্রির দৈর্ঘ্য, সমুদ্রস্রোত, স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন, বায়ুপ্রবাহ, অরন্য, মৃত্তিকা, নগারায়ান ও শিল্পায়ান ইত্যাদি।
এইসব নিয়ন্ত্রক গুলির মধ্যে আমাদের আলোচ্য বিষয় – নিয়ন্ত্রক রূপে স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন এবং নগরায়ান ও শিল্পায়ন।
i) স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন:- পৃথিবীর কোন সমুদ্র থেকে যত দূরে অবস্থিত হয় সেখানে উষ্ণতার ততই চরমভাব দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে একই অক্ষাংশ এ অবস্থিত মহাদেশুলির স্থলভাগ সমুদ্রের জল ভাগের চেয়ে অনেক বেশি উত্তপ্ত হয়। এজন্য সমুদ্রের নিকটবর্তী অঞ্চলের আবহাওয়া সবসময় সমভাবাপন্ন হয়।
অপর দিকে সমুদ্র থেকে দূরে অবস্থিত মহাদেশের ভিতরের দিকে সমুদ্রের প্রভাব ততটা পড়েনা বলে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু দেখা যায়। অর্থাৎ এখানে ঠান্ডা ও গরম খুব বেশি। এইধরনের জলবায়ুকে মহাদেশীয় জলবায়ু বলে।
ii) নগরায়ান ও শিল্পায়নের ভূমিকা:- গ্রাম অঞ্চলের তুলনায় শহর অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা অনেক বেশি।শহরের বাড়ি গুলিও সাধারণত কংক্রিট বাড়ি(ইট,সিমেন্ট, বালি, রড দিয়ে তৈরি)। ফলে এদের আপেক্ষিক তাপ কম। ফলে দিনের বেলায় শহর যতটা উত্তপ্ত হয়, গ্রাম ততটা হয় না।
অপরদিকে শহর অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধির আরও একটি কারণ হল – শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কলকারখানা র চিমনি থেকে নির্গত ধোয়া ও ধুলি কণা।বর্তমানে শহর ও শিল্প এ দুটির দূষণ থেকেই পৃথিবী সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।